মঠবাড়ী খ্রিস্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিঃ- আমাদের অহংকার

সৃষ্টির প্রেক্ষাপট-শুরু হয়েছিল যেভাবে:

কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের আর দশটা এলাকার মত মঠবাড়ী এলাকার জনগনের আয়ের প্রধান উৎস ছিল কৃষি কাজ। মাঠবাড়ী অঞ্চলের মাটি লাল ও উঁচু। একটু বৃষ্টিতে কাঁদায় ভরে যায় আবার রোদ উঠলেই মাটি শুকিয়ে শক্ত কাঠের মত। আবার অনেকে টেংগুইরা বলে মন্তব্য করে থাকেন। সমস্ত এলাকাই বড় বড় গাছে বেষ্টিত বলে জঙ্গলের আর্শীবাদও আমাদের রয়েছে। জঙ্গলাবেষ্ঠিত জমিতে চাষাবাদ করে শস্য উৎপাদন করা ছিল অত্যন্ত কষ্টকর ও ব্যয় সাপেক্ষ। ফলে মৌসুমী ফল ও জমিতে জন্মানো শস্যের উপর নির্ভর করতো মঠবাড়ীবাসীর পরিবারিক তথা তাদের আর্থিক অবস্থা। যে বছর মৌসুমী বৃষ্টি সময় মত হতো, সে বছর তাদের ক্ষেতে ফলতো সোনার ফসল, গাছে গাছে থাকতো মৌসুমী ফল। সে বছর আমাদের মুখেও থাকতো হাসি। এতে চেষ্টার পরও আমাদের বেশিীর ভাগ পরিবার ছিল অস্বচ্চল ও আর্থ-সামাজিক ভাবে পিছিয়ে। তাই পারিবারিক কোন বড় ধরণের কাজ যেমন বাড়ী তৈরী, ছেলে বা মেয়ের বিয়ে, বাব-মা বা ছেলে-মেয়ের চিকিৎসা, পড়াশুনা ইত্যাদি করতে গেলেই বাড়ীর সব বড় বড় ফলজ গাছ অথবা ফসলি জমি বিক্রির মত বড় ধরনের সিন্ধান্ত নিতে হতো। নগদ টাকার প্রয়োজন মেটাতে সুদ ব্যবসায়ীদের নিকট হতে চঁড়া সুদে টাকা ধার নিতে হতো। কিন্তু সে টাকা আর কোন দিনই শোধ করা হয়ে উঠতোনা। টাকার বদলে সুদ ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিতে হতো পৈতৃক সম্পত্তি। দিনের পর দিন আমাদের জমি হাত ছাড়া হতে থাকে।
অভাবের সময় প্রয়োজনীয় টাকা জোগার করার জন্য শরীরের ঘাম ঝঁড়ানো, রৌদ্রে পুড়া কষ্টে জন্মানো জমির ধান অল্প মূল্যে মহাজনদের নিকট তুলে দিতে হতো। আবার চঁড়া দাম দিয়ে প্রয়োজনের সময় সেই ধানই ক্রয় করে সংসারের খাবার জোগার করতে হতো। ফলে দিনের পর দিন অভাব আমাদের নিঃস্ব করেছে। ধ্বংস করেছে আমাদের অর্থ-সামাজিক বুনিয়াদ, নিস্ব হয়েছি আমরা।
মঠবাড়ীর এ চিত্র আমাদের খ্রিস্টান সমাজের প্রায় সব জায়গাতেই একই রকম ছিল। আমাদের এ দূর অবস্থার কথা চিন্তা করে চিন্তিত হয়ে পড়লেন আমাদের ধর্ম-গুরুরা। কিভাবে এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তার পথ খুঁজতে শুরু করলেন। তারা পথ খুঁজতে থাকলেন কিভাবে সমাজের সুদখোর মহাজনদের হাত থেকে মুক্ত করা যায়? কিভাবে সমাজের অর্থ-সামাজিক দুরাবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়? কিভাবে আর্থিক স্বনির্ভরতা আনার মাধ্যমে সামাজিক সম্পদ বেহাত হওয়া থেকে রক্ষা করা যায়? এ থেকে মুক্তির প্রয়াসে চার্চের ফাদারগন মিশন বা কেন্দ্রীয় সমিতির নেতা ও গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে শলাপরামর্শ করতে থাকেন তৎকালীন পাল পুরোহিত রেভা: ফাদার বার্গম্যান সিএসসি। তার বলিষ্ঠ উদ্যেগ, নেতৃত্ব ও পরিশ্রমের ফলে সংগঠিত হতে পেরেছিল তৎকালীন সুন্দর ও সুখী মঠবাড়ীর স্বপ্ন দ্রষ্টাগন।

২ জুন ১৯৬২ আমাদের জন্য একটি স্বর্ণালী দিন:

অবশেষে মুক্তির পথ ও আলোর সন্ধান পাওয়া গেল বাংলাদেশে সমবায়ের জনক রেভা: ফাদার চার্লস জে ইয়াং সিএসসি’র হাত ধরে। তৎকালীন পাল পুরোহিত রেভা: ফাদার বার্গম্যান সিএসসি’র প্রচেষ্টায় ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়, রেভা: ফাদার চার্লস জে ইয়াং সিএসসি’র পরামর্শ ও চিন্তা এবং মঠবাড়ীকে নিয়ে যারা সব সময় চিন্তা করতেন সেই সব সমাজ নেতাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সহমর্মীতার ফসল বাস্তবতায় রূপ নিল। মানুষের মুক্তির স্বপ্নদ্রষ্টা রেভা: ফাদার চার্লস জে ইয়াং সিএসসি এর প্রচেষ্টায় ভাওয়াল অঞ্চলে সর্ব প্রথম মঠবাড়ী ধর্মপল্লীতে ২ জুন ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বপ্নের সমিতি “মঠবাড়ী খ্রিস্টান সমবায় ঋণদান সমিতি” যা “সাধু আগষ্টিনের সমিতি” নামেই বেশি পরিচিত ছিলো। ২ জুন আমাদের স্বপ্নের দিন, আনন্দে আতœহারা হবার দিন। এ সমিতি আজ আমাদের গর্বের ধন নীলামনি। এ সমিতিকে আকঁড়ে ধরে আমরা বেড়ে উঠেছি, বড় হয়েছি। তৈরী করেছি নিজেদের ও আমাদের আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যত।
১৯৬২ খ্রিস্টাব্দর ২ জুন মঠবাড়ী খ্রিস্টান সমবায় ঋণদান সমিতির নামে যে বীজ বপন করা হয়েছিল তা আজ বট বৃক্ষে পরিণত হয়েছে। সমিতির শুরু থেকে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে এই সমিতিকে এ পর্যন্ত আসতে সহযোগিতা করেছেন, যারা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন, যারা নিজেরা আজ আমাদের কাছে ইতিহাস, যাদের জন্য আমাদরে এ প্রাপ্তি, তাদের আমরা কতটা মূল্যাযন করতে পেরেছি? কতটা সম্মান তাদের দিতে পেরেছি? তারা কারা আমরা কি তা জানি বা জানতে চেষ্টা করেছি কখনো?
আমরা শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতার সাথে তাদরে স্মরণ করি। সমিতি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রেভা: ফাদার চার্লস জে ইয়াং সিএসসি এবং তৎকালীন পাল পুরোহিত রেভা: ফাদার বার্গম্যান সিএসসি’র সহযোগিতার পাশাপাশি নাগরী মিশনের প্রয়াত নাইট ভিনসেন্ট রড্রিক্স স্যারের অবদান অনেক বেশী। তা সহযোগিতা না পেলে আমাদের সমিতির আজ জন্মই হয়তো হতো না। যাদের প্রচেষ্টায় সমিতি গঠনের প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন হয়েছিল, যে মানুষগুলোকে স্মরণ না করলেই নয়, সে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিবর্গ হলেন-
১। প্রয়াত ফাদার বার্গম্যান সিএসসি-স্থানীয় পালক পুরোহিত, ২। প্রয়াত ফাদার চার্লস জে ইয়াং-বাংলাদেশের সমবায়ের জনক, সমবায় সংগঠক ও ধর্ম প্রচারক, ৩। নাগরী মিশনের প্রয়াত নাইট ভিনসেন্ট রড্রিক্স-নাগরী সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ৪। দক্ষিণ ভাসানিয়ার প্রয়াত আগষ্টিন ছেড়াও-নাগরী সেন্ট নিকোলাস উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষ, ৫। প্রয়াত আলফ্রেড রোজারিও ( মাস্টার) মীরেরটেক, ৬। প্রয়াত যোসেফ রোজারিও-উত্তর ভাসানিয়া, ৭। প্রয়াত পিউস রোজারিও উলুখোলা, ৮। প্রয়াত যোসেফ এরন রোজারিও উলুখোলা, ৯। প্রয়াত মংলা দেশাই-বাঁশবাড়ী, ১০। প্রয়াত ইস্কট রোজারিও-উত্তর ভাসানিয়া, ১১। প্রয়াত মাইকেল রোজারিও-উত্তর ভাসানিয়া, ১২। প্রয়াত সিলভেস্টার গমেজ-মাল্লা, ১৩। মি: নিমাই এডুয়ার্ড গমেজ-মঠবাড়ী, ১৪। প্রয়াত যুযা ফিলিপ-কুলুন, ১৫। প্রয়াত ফ্রান্সিস পেরেরা-কুলুন, ১৬। প্রয়াত জারমন রোজারিও-কুলুন, ১৭। মিস বেনেডিক্ট গমেজ-তেতুঁইবাড়ী, ১৮। প্রয়াত টমাস রোজারিও-মঠবাড়ী, ১৯। প্রয়াত পাঁচু নিকোলাস পেরেরা ( মেম্বর)-কুলুন, ২০। প্রয়াত আলফ্রেড রোজারিও-পারোয়ান, ২১। মি. অনীল রোজারিও-উত্তর ভাসানিয়া, ২২। প্রয়াত আন্তনী রিবেরু উত্তর ভাসানিয়া, ২৩। প্রয়াত পিয়ব রোজারিও-উলুখোলা, ২৪। প্রয়াত বেঞ্জামিন ডি’ক্রুশ-মঠবাড়ী, ২৫। প্রয়াত চার্লি রোজারিও-মঠবাড়ী, ২৬। প্রয়াত পল পেরেরা-কুলুন, ২৭। প্রয়াত মদন পেরেরা-কুলুন, ২৮। প্রয়াত গ্রেগরী রোজারিও (গেরাই)-মাল্লা, ২৯। প্রয়াত নিলু পেরেরা-কুলুন, ৩০। প্রয়াত বেঞ্জামিন রোজারিও-বাগবাড়ী, ৩১। মি: গাব্রিয়েল কোড়াইয়া-দক্ষিণ ভাসানিয়া প্রমুখ চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ।
উপরোক্ত ব্যক্তিবর্গের প্রচেষ্টায় সমিতির প্রাথমিক কার্জ-কর্ম পরিচালনার জন্য এবং নির্বাচিত কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করার লক্ষ্যে যে শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিদের নিয়ে ৯ সদস্য বিশিষ্ট আহ্ববায়ক কমিটি গঠিত হয়েছিল তারা হলেন-
১। প্রয়াত আগষ্টিন ছেড়াও (মাস্টার)-দক্ষিণ ভাসানিয়া,
২। প্রয়াত পঁচু নিকোলাস পেরেরা-কুলুন,
৩। প্রয়াত আলফ্রেড রোজারিও (মাস্টার)-মীরেরটেক,
৪। প্রয়াত এরন রোজারিও-উলুখোলা,
৫। প্রয়াত নিলু পেরেরা-কুলুন,
৬। প্রয়াত পল পেরেরা-কুলুন,
৭। প্রয়াত মদন পেরেরা-উলুখোলা,
৮। প্রয়াত পিউস রেজারিও-উলুখোলা,
৯। প্রয়াত চার্লী রোজারিও-মঠবাড়ী।
প্রতিষ্ঠা লগ্নে সমিতির প্রাথমিক বা প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন মাত্র ৩০ জন মহাগুণী, মহাত্যাগী কয়েকজন মানুষ। এদের মধ্যে ইতিমধ্যে প্রয়াত হয়েছেন ২৮ জন। আমরা তাদের আত্মার চির শান্তি কামনা করি। সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্যগন যারা ১ জুলাই ১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে একত্রে সদস্য পদ গ্রহণ করেছিলেন তারা হলেন-
১। প্রয়াত আলফ্রেড রোজারিও -মীরেরটেক, সদস্য নং-১
২। প্রয়াত আগষ্টিন ছেড়াও-দক্ষিণ ভাসানিয়া, সদস্য নং-২
৩। প্রয়াত টমাস রোজারিও-মঠবাড়ী, সদস্য নং-৩
৪। প্রয়াত যোসেফ এরন রোজারিও-উলুখোলা, সদস্য নং-৪
৫। প্রয়াত যোসেফ রোজারিও-উত্তর ভাসানিয়া, সদস্য নং-৫
৬। প্রয়াত নিকোলাস পেরেরা-কুলুন, সদস্য নং-৬
৭। প্রয়াত আন্তনী কস্তা-মাল্লা, সদস্য নং-৭
৮। প্রয়াত ভোলা ছেড়াও-দক্ষিণ ভাসানিয়া, সদস্য নং-৮
৯। মি. নিমাই গমেজ-মঠবাড়ী, সদস্য নং-৯
১০। প্রয়াত মাইকেল রোজারিও-উত্তর ভাসানিয়া, সদস্য নং-১০
১১। প্রয়াত টমাস পেরেরা-উলুখোলা, সদস্য নং-১১
১২। প্রয়াত পিয়প রোজারিও-মাল্লা, সদস্য নং-১২
১৩। প্রয়াত বাসি রোজারিও-মাল্লা, সদস্য নং-১৩
১৪। প্রয়াত পিটার পেরেরা-কুলুন, সদস্য নং-১৪
১৫। প্রয়াত পেদ্রু পেরেরা-কুলুন, সদস্য নং-১৫
১৬। প্রয়াত মঙ্গলা দেশাই-বাঁশবাড়ী, সদস্য নং-১৬
১৭। প্রয়াত ফ্রান্সিস রোজারিও-ভাসানিয়া, সদস্য নং-১৭
১৮। প্রয়াত যদু গমেজ-উলুখোলা, সদস্য নং-১৮
১৯। প্রয়াত বাবন পিউরিফিকেশন-দক্ষিণ ভাসানিয়া, সদস্য নং-১৯
২০। প্রয়াত সিলভেষ্টার গমেজ-মাল্লা, সদস্য নং-২০
২১। প্রয়াত ইসমন গমেজ-তেতুঁইবাড়ী, সদস্য নং-২১
২২। মিঃ পল পিউরিফিকেশন-মাল্লা, সদস্য নং-২২
২৩। প্রয়াত আলফ্রেড রোজারিও-উলুখোলা, সদস্য নং-২৩
২৪। প্রয়াত জন ডি’ক্রুশ-মঠবাড়ী, সদস্য নং-২৪
২৫। প্রয়াত আগষ্টিন রোজারিও-উলুখোলা, সদস্য নং-২৫
২৬। প্রয়াত জন গমেজ তেতুঁইবাড়ী, সদস্য নং-২৬
২৭। প্রয়াত পিয়প পিউস রোজারিও-উলুখোলা, সদস্য নং-২৭
২৮। প্রয়াত পল পেরেরা-কুলুন, সদস্য নং-২৮
২৯। প্রয়াত আলফ্রেড রোজারিও-পারোয়ান, সদস্য নং-২৯
৩০। প্রয়াত বার্ণাড পিউরিফিকেশন-দক্ষিণ ভাসানিয়া, সদস্য নং-৩০

সমিতির প্রথম কার্যকরী পরিষদ:

যে মহান সমাজ কর্মীগণ আমাদের সমাজের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা প্রথম চিন্তা করে, তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে, নিজের পরিবারের সদস্যদের সময় না দিয়ে, সমিতির হাল শক্ত হাতে ধরার জন্য প্রথম কার্যকরী পরিষদে অর্ন্তভুক্ত হতে রাজি হয়ে ছিলেন, নিয়ে ছিলেন সমিতি পরিচালনার মত পাহাড় কঠিন দায়িত্ব সেই অদম্য সাহসী যোদ্ধা, মহান মানুষগুলো হলেন-
১। প্রয়াত আগষ্টিন ছেড়াও চেয়ারম্যান
২। প্রয়াত টমাস রোজারিও-ভাইস-চেয়ারম্যান
৩। প্রয়াত যোসেফ এরন রোজারিও-সেক্রেটারী
৪। প্রয়াত আলফ্রেড রোজারিও (মাস্টার)-ম্যানেজার
৫। প্রয়াত সিলভেষ্টার গমেজ-কোষাধ্য
৬। প্রয়াত গ্রেগরী রোজারিও-সদস্য
৭। প্রয়াত যোসেফ রোজারিও-সদস্য
৮। প্রয়াত টমাস পেরেরা-সদস্য
৯। প্রয়াত আব্রাহাম ডি’ক্রুশ-সদস্য
তাদের নিকট সমিতির পরিচালনার কাজটি প্রচান্ড কঠিন ছিল। কেননা ভাওয়াল এলাকায় এই ধরনের সমিতি এই প্রথম। এ ধরনের উদ্যোগ দেখেনি কেউ কোন দিন। ঋণদান সমিতি কিভাবে চালাতে হয়, কিভাবে তার হিসাব সংরক্ষণ করতে হয়, তার কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা তাদের কারোই ছিলোনা। শুধু মাত্র ফাদার বার্গম্যান সিএসসি অদম্য মনোবল, ফাদার চার্লস জে ইয়াং এর সাহস ও কর্ম পদ্ধতির বাস্তব অভিজ্ঞতা, নাইট ভিনসেন্ট রড্রিক্স স্যারের সহযোগিতা এবং আমাদের পূর্ব পুরুষদের ঐকান্তিক ইচ্ছা, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার আগ্রহ ও তাদের ত্যাগ সে কঠিন কাজকেও সহজ করে তুলেছিল। তাদের সেদিনের সেই ত্যাগের ফসল আমাদের প্রাণপ্রিয় সমিতি যা বটবৃক্ষের মত আমাদের ছায়া দিয়ে আগলে রেখেছে। মরুভূমিতে মরুদানের মত পানীয় দিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রয়োজনের সময়। মায়ের মত আগলে রেখেছে আমাদের।

সমিতির প্রাথমিক মূলধন:

সমিতির প্রতিষ্ঠা লগ্নে কোন নিবন্ধিত মূলধন ছিলনা। কিন্তু সমিতির প্রথম শেয়ার জমা হয়েছিল ৫০ পয়সা এবং ১ টাকা সদস্য ভর্তি ফিস, যা আজ কোটি কোটি টাকায় পরিণত হয়েছে। সমিতির প্রথম ঋণ প্রদান করা হয়েছিল মাত্র ৫০ টাকা, যা আজ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১২ লক্ষ টাকায়।
আজ সমিতি মঠবাড়ী ধর্মপল্লীবাসীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা, স্বর্নিভরতা অর্জনের দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ন অবদান রেখে যাচ্ছে। কিন্তু এক দিনে সমবায়ের এই মন্ত্র আমাদের দ্বারে এনে পৌছাঁয়নি। প্রথম দিকে সমবায় সমিতি চালানোর মত অভিজ্ঞ লোক আমাদের ছিলো না। তাই বহু চড়াই উৎড়াই পেড়িয়ে আজকের এ অবস্থানে এসে পৌঁছেছি।
তখন রবিবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। রবিবার দিন মিশার পর সভা করা হতো এবং সদস্যদের নিকট হতে ঋণ ও শেয়ারের টাকা সংগ্রহ করা হতো এবং সংগৃহীত টাকা থেকে সদস্যদের মাঝে ঋণ হিসাবে প্রদান করা হতো। প্রথম দিকে সমিতি সমন্ধে আমাদের মা-বাবা, কাকা-জেঠারা এতোটা সচেতন ছিলেন না। কেননা সমিতি বিষয়টা তাদের নিকট নতুন একটি বিষয় ছিল। তাই তাদের মনে দ্বিধাদ্বন্দ কাজ করছিল। কিন্তু গ্রামে গ্রামে বাড়ী বাড়ী ঘুরে সমিতির প্রয়াত চেয়ারম্যান বেঞ্জামিন ডি’ক্রুশ মঠবাড়ীবাসীদের সমিতির সদস্য হওয়ার জন্য অনুরোধ করতেন। সমিতি কিভাবে আমাদের মাঝে সুফল বয়ে আনছে, তা সবাইকে বুঝাতেন। সমিতি করা খারাপ কিছু নয় বরং এটা আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন করবে এটা তিনি সবাইকে বুঝাতে চেষ্টা করেন। তার সে কথায় বিশ্বাস করেছিল মঠবাড়ীর মানুষ। ফলে সমিতির সদস্য সংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়।

সমিতির প্রথম কার্যালয়-রাস্তার পার্শ্বে মাটির ঘর:

বর্তমান সমিতির যে কার্যালয় রয়েছে, তার উত্তর পার্শ্বে বাউন্ডারী ওয়ালের বাইরে, রাস্তার উত্তর পাশে পশ্চিম-দক্ষিণ কোনে লরেন্স ক্রুশের জমিতে মাটির দেওয়াল দেয়া একটি দিনের ঘর ছিল, যা সমিতির কার্যালয় হিসাবে ব্যবহৃত হতো। অনুমান করা হয় যে ঘরটি তৈরী হয়েছিল সমিতির টাকায় ( প্রয়াত টমাস রোজারিও দাবী করতেন যে ঐ ঘর তিনি সমিতির কালেকশনের জন্য নিজের টাকায় তৈরী করেছিলেন)। ঘরটি ছিল দক্ষিণ মুখী। একটি বড় বারান্দা ও কাঠের দরজা জালানা ওয়ালা একটি মাটির ঘর। ধূলা ও ময়লায় ভরা থাকতো ঘরটি। প্রতি রবিবার মিশা করার পর তৎকালীন কর্মকর্তাগণ নিজেরাই এ ধূলাবালি ঝাঁড় দিতেন, সভা ও কালেকশন করতেন এবং সমিতির কার্যক্রম চালাতেন। পরবর্তীতে সমিতি ও সদস্যদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সমিতির কর্মকর্তাগণ সমিতির কার্যালয় ও কালেকশন এর স্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়। সমিতির কার্যালয় স্থানাস্তরের ফলে অযতœ আর অবহেলায় সমিতির ঘরটি নষ্ট হতে থাকে এবং এক সময় প্রয়াত টমাস রোজারিও সেই ঘরটি বিক্রি করে টাকা নিজে নিয়ে নেন।

সমিতির দ্বিতীয় কার্যালয়-বাঁশের বেড়া দেওয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়:

সমিতির নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সমিতির কার্যালয় বাইরে থেকে ভিতরে স্থানান্তর করা হয় মঠবাড়ী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। এখানে দীর্ঘ দিন সমিতির কার্যক্রম চালানো হয়। পরবর্তী সময়ে সমিতির অধিক নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সমিতির কার্যালয় সেন্ট ভিনসেন্ট ডি’ পৌলের কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়।

সমিতির তৃতীয় কার্যালয়-সেন্ট ভিনসেন্ট ডি’ পৌল:

সমিতিও সদস্যদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে সমিতির কর্মকতাগণ সমিতির কার্যালয় ও কালেকশন এর স্থান পরিবর্তন করে অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করেন ফদার বাড়ীর ভিতর সেন্ট ভিনসেন্ট ডি’ পৌলের অফিস ঘরে।
সেখানে সেন্ট ভিনসেন্ট ডি’ পৌল সমিতির কর্মকর্তাদের সাথে ভাগাভাগি করে সমিতির কার্যক্রম অত্যন্ত কষ্ট করে চালাতে হয়েছে। তবুও হাল ছাড়েননি তারা। তারা দিনের পর দিন ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিয়ে গেছেন। সেখানে জায়গা ও সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়েছে আমাদের সমিতির অনেক মূল্যবান ফাইল ও নথি-পত্র। জুবিলী হাউজ না হওয়া পর্যন্ত সেই সেন্ট ভিনসেন্ট ডি’ পৌলের কার্যালয়েই চলে সমিতির কার্যক্রম।

সমিতির ক্রান্তিকাল:

বলিষ্ঠ নেতৃত্বের হাত ধরে সমিতি যখন হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছিল যৌবনের পথে, ঠিক তখনই কর্ম ব্যস্থতায়, জীবনের তাগিদে অবচেতন ভাবেই অমনোযোগী হয়ে পড়েন এ সমিতির কর্মকর্তা ও সদস্যগণ। ফলে অগ্রগতির ধারা কিছুটা স্লথ হয়ে পড়ে। সমিতিতে কিছুটা আর্থিক সংকট দেখা দেয়। সদস্যদের মাঝে চাহিদা মত প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছিল না। এমন ক্রান্তি কালে সমিতির আর্থিক সঙ্কটা কাটানোর জন্য সমিতির তৎকালীন কর্মকর্তাগণ ধানের ব্যবসা করার সিন্ধান্ত গ্রহণ করেন। প্রথম দিকে ভালই চলছিল এ ব্যবসা। প্রায় ২৫০ মন ধান কেনা বেঁচার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ ব্যবসা। পরবর্তীতে ধানের আরেকটি চালান আনতে গিয়ে ধান বোঝাই নৌকা বিলের মাঝে ডুবে যায়। সে ধান আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফলে সমিতি বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মধ্যে পড়ে এবং ক্ষতির পরিমান তৎকালীন টাকায় প্রায় ২৫০০০ হাজার টাকা। এ সংকট আর কাটিয়ে উঠা সম্ভব হয় না। থেমে যায় সমিতির অগ্রতির চাকা। কর্মকর্তা ও সদস্যদের মাঝে দেখা দেয় হতাশা। এ সময় কর্ম-চাঞ্চল্য স্থবির হয়ে যায় এবং সমিতির কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হবার উপক্রম হয়। এ সময় কালেকশন কমে যায়, সদস্যদের মাঝে ঋণ দেয়া প্রায় বন্ধই হয়ে পড়ে। সমিতি একটি পকেট সমিতিতে পরিনত হয়। এমনো শোনা যায় এবং তথ্য পাওয়া যায় যে, এসময়ে সমিতির হিসাবপত্র জমা রেখে কর্মকর্তাদের পকেট থেকে টাকা দিয়ে ঋণ দেয়া হতো। তখন সমিতির টাকার আর নিজের টাকা এক হয়ে গিয়েছিল। এ সময়ে সমিতি হাজার হাজার টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কথিত আছে তৎকালীন অনেক কর্মকর্তা সমিতির টাকায় জমি কিনেছেন, কিনেছেন মেশিন, কেউ বা কিনেছেন ভিটে জমি, কেউবা বর্গা নিয়েছেন অন্যের ফলের বাগান। সমিতি তখন পরিণত হয় ব্যক্তির সমিতিতে, পারিবারিক সমিতিতে।
সমিতির গতি ফিরিয়ে আনার জন্য তখনকার পালক পুরোহিত প্রয়াত ফাদার দামিয়েন রুরাম উদ্যেগ গ্রহণ করেন। তিনি সমাজের বিভিন্ন মাত্বর শ্রেণির ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করতে থাকেন কিভাবে সমিতি আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়। তিনি সবার মনে আশার সঞ্চার করেন, নতুনভাবে সমিতিকে গড়ার স্বপ্ন দেখান। তার এ উদ্যোগে সামিল হয়ে সমিতিকে এ অবস্থা থেকে বাঁচানোর জন্য এগিয়ে আসেন মি: অনীল রোজারিও, প্রয়াত বেঞ্জামিন ডি’ক্রুশ, :ি নিমাই এডুয়ার্ড গমেজ, প্রয়াত নাইট ভিনসেন্ট রড্রিক্স (স্যার), প্রয়াত আগষ্টিন ছেড়াও, প্রয়াত যোসেফ এরন রোজারিও, মি: এন্ড্রু বাদল রোজারিও, মিস বেনেডিক্টা গমেজ, প্রয়াত বাদল রোজারিও, মি; নিকোলাস গমেজ, মি: হেনেচি ক্রুশ প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। তাদের সহায়তায় ও কঠোর পরিশ্রমে সমিতির কাজ পুনরুদ্যমে শুরু হয়। আবার গতি আনতে থাকে সমিতির কার্যক্রমে।
বহু কষ্টে নথিপত্র চেক করে সমিতির হিসাব ঠিক করা হয়। এক এক বেরিয়ে আসতে থাকে বিভিন্ন জনের নিকট সমিতির পাওনার হিসাব। বহু মিটিং ও দেনদরবার করে এ টাকা উদ্ধার করতে হয়েছে। এমনি কি আর্চ বিশপের মধ্যস্থতায় বিশেষ সভা করতে হয়েছে বিশপ হাউজে। তারপরও সমস্ত টাকা আদায় করা সম্ভব হয়নি সঞ্চয়ের টাকা। বছরের পর বছর অনাদায়ী রয়ে গেছে এ টাকা। শেষে বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুমোদনের মাধ্যমে তা অবলুপ্তির মাধ্যমে সমন্বয় করতে হয়েছে, যার পরিমান ছিল তৎকালীন সময়ে কম বেশী প্রায় ২০,০০০ হাজার টাকা। যার বর্তমান মূল্য আজ হয়তো কয়েক কোটি টাকা।
সমিতির আর্থিক সংকট কাটাতে ফাদার দামিয়েন রোরাম তার নিজের পকেট থেকে প্রায় ১৫,০০০ হাজার টাকা দেন। তার পথ অনুসরণ করে তখন অনেকেই তাদের নিজের টাকা দিয়ে সমিতির আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন -প্রয়াত টমাস রোজারিও, প্রয়াত আগষ্টিন ছেড়াও ও প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। তাদের সেদিনের সে কর্মের কথা সমিতি চির দিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।

সমিতির রেজিষ্ট্রেশন ও নাম পরিবর্তন:

১৯৬২ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন মঠবাড়ী খ্রিস্টান সমবায় ঋণদান সমিতি জন্ম লাভ করে এ নামেই সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। ১৯৮৪ সালের ১১ আগষ্ট সমিতি রেজিষ্ট্রেশন গ্রহণ করে, যার নম্বর ২৪/৮৪ এবং এ নামেই সমিতি নিবন্ধিত হয়। সরকারীভাবে নিবন্ধন গ্রহণ ও অনুমোদন প্রাপ্ত হলে সমিতি কার্যক্রম পরিচালনার বৈধতা লাভ করে। পরবর্তীতে ৬ জুলাই ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে সংশোধিত নিবন্ধন গ্রহণ করা হয় যার নং-১১/৯৬।
পরবর্তী সময়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমবায় মন্ত্রলায় আইন করে ক্রেডিট ইউনিয়ন এবং অন্যান্য সমিতির সমূহের শ্রেণী বিভাজন করেন এবং সমবায় ঋণদান সমিতি গুলোকে কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন নাম ব্যবহার করতে হুকুম জারি করেন। ফলে সমবায় মন্ত্রনালয়ের অধীনে নিবন্ধিত সমবায় সমিতিসমূহ তাদরে নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম নিতে বাধ্য হয়। এরই ধারা বাহিকতায় মঠবাড়ী খ্রিস্টান সমবায় সমিতি লি; তাদের নাম পরিবর্তন করেন“মঠবাড়ী খ্রিস্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি:” এবং ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০১১ তারিখে নতুন ভাবে নিবন্ধন গ্রহণ করেন যার নম্বর ৮/২০১১ এবং মঠবাড়ী খ্রিস্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লি: নাম ধারণ করে তার কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
সমিতির প্রথম আর্থিক বছর দেড় বছরের অর্থাৎ ১ জুলাই ১৯৬২ থেকে ৩১ ডিসেম্বর ১৯৬৩ পর্যন্ত। পরবর্তীতে ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আর্থিক বছর গননা করা হতো। এভাবে অর্থ বছরের হিসাব চলে ডিসেম্বর ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত। ১ জানুয়ারী থেকে ৩০ জুন ১৯৮৩ পর্যন্ত ছয় মাসের আলাদা একটি হিসাব রাখা হয় এবং সমিতি নিবন্ধিত হবার পর সমিতির আর্থিক বছর বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক বছরের সাথে মিলিয়ে পরিবর্তন করা হয়, যা ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত হিসাব গননা করা হয় এবং আজ পর্যন্ত তা কার্যকর রয়েছে।

জুবিলী হাউজ-এক মহান ত্যাগের ফসল:

জুবিলী হাউজ আমাদের গর্ব ও ত্যাগের ফসল। বিগত ১৯৮৬-১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে আমাদের প্রানপ্রিয় সমিতি ২৫ বছর পূর্ণ করে। সমিতির ২৫ বছরের পূর্তি উৎসব পালন করার জন্য সব রকমের প্রস্তুতি ছিল আমাদের। এর জন্য একটি তহবিল জমা করা হয়েছিল। আমাদের প্রচন্ড ইচ্ছা ছিল ২৫ বছরের উৎসবকে যাকজমকের সহিত পালন করার। এমন সময় আমাদের সামনে নতুন চমক ও প্রস্তাব নিয়ে এলেন আমাদের প্রান প্রিয় শিক্ষক নাইট ভিনসেন্ট রড্রিক্স। তিনি বললেন, জুবিলী পালন করবেন, ভাল কথা। তহবিলের সমস্ত টাকাটাই দু-এক দিনের অনুষ্ঠানে খরচ হয়ে যাবে। অথচ আপনাদের নিজিস্ব কার্যালয় নেই। আপনারা অন্যের দেয়া রুম কার্যালয় হিসাবে ব্যবহার করছেন। জুবিলী করার চেয়ে বরং জুবিলীর টাকা দিয়ে একটি কার্যালয় স্থাপন করেন যেখানে বসে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে পারবেন। সদস্যগণ বসতে পারবেন, আপনাদের সাথে তাদের দুঃখ কষ্ট সহভাগিতা করতে পারবেন। সমিতির জিনিসপত্র সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারবেন। শ্রদ্ধেয় স্যারের সেই প্রস্তাবে আমাদের তৎকালীন বোর্ড আনন্দের সহিত গ্রহন করলেন এবং উপদেষ্টা ও অন্যান্যদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, জুবিলীর টাকায় তৈরী হবে আমাদের নিজস্ব কার্যালয়। সেই থেকে যাত্রা শুরু আমাদের জুবিলী হাউজের। পরবর্তীতে স্থানীয় পাল-পুরোহিতের সহায়তায়, মহামান্য আর্চ বিশপের নিকট প্রস্তাব রাখা হয় যেন চার্চ এর সীমানার মধ্যে একটু জমি দেওয়া হয় সমিতির নিজস্ব কার্যালয় স্থাপন করার জন্য। তৎকালীন মহামান্য আর্চ বিশ্বপ মাইকেল রোজারিও সমিতির অগ্রযাত্রায় সামিল হলেন। তিনি তার সদয় সম্মতি জ্ঞাপন করলেন মিশন সীমানার মধ্যে বর্তমানে যে জায়গায় সমিতির কার্যালয় রয়েছে সেখানে যেন সমিতির স্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করা হয়। তারপর শুরু হলো সমিতির কার্যালয় স্থাপনের কাজ। ফলোশ্রুতিতে ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ৩০ আগষ্ট প্রতিষ্ঠা হয় সমিতির বর্তমান কার্যালয় এবং নাম দেয়া হয় জুবিলী হাউজ। কেননা জুবিলী তহবিল দিয়ে তৈরী করা হয় আমাদের এ গর্বের অফিস, যা ভাওয়াল এলাকায় কোন ঋণদান সমিতির প্রথম স্থায়ীকার্যালয় হিসাবে পরিচিত লাভ করে। পরবর্তী ২০০৭-২০০৮ অর্থ বৎসরে এর আকার বৃদ্ধি করা হয় এবং বর্তমান রূপ লাভ করে।